১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন ঃ আলেয়া : উইল অ দ্য উইসপ ১ম পর্ব
[পর্ব ঃ ২ ]প্রায় বছর দশেক আগে , তখন আমি চাকরি পাই নি । সবে এন্টারমিডিয়েট ( এইচ এস সি ) পাস করে খুলনা ভার্সিটি তে জিওলজি বিভাগে ভর্তি হলাম । আশা ছিল ঢাকা থেকে পড়ার , কারন , ঢাকায় মামারা থাকে সেই জন্য সুবিধা হবে । কিন্তু কপাল মন্দ । চান্স পেলাম না । পড়ে রইলাম পাড়া গেয়ো শহরে । অবশ্য রেজাল্ট খারাপ ছিল না , সেটা তোরা জানিস । বাড়ির বড় ছেলে আমি সুতরাং , কাজের চাপটা আমারই সব থেকে বেশি । ফলে এখানে- সেখানে আমাকেই বেশি দোড়াতে হয় । তবে সব সময় না , যখন ছুটি পাই তখন । বাড়িতে আমরা মানুষ বেশি না । আমাদের একক পরিবার । বাবা - মা , আমি আর আমার ছোট ভাই হালিম । এই চার জনেই পরিবার ।
পারিবারিক কাজে বা মামার বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার জন্যে হলেও বছরে অন্তত কিছুদিনের জন্যে আমাকে ঢাকায় কাটাতে হয় । একবার খবর পেলাম , মামার পুচ্ছে ছেলেটার খুব অসুখ - টাইফয়েড । আমাকে অন্তত একবার যেতে অনুরোধ করছে মামা । আসলে , মামার তো কোনো ছেলে ছিল না । তাই আমাকেই ছেলের মত দেখেন । এই তো সেদিন হল পিচ্ছিটা হল ।
ভোরের বাসে উঠলাম , একটা দারুন আনন্দ বুকে চেপে । বাবা বাস পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন ।
আমি মামার বাসায় যাচ্ছি । মনে কত নতুন পুরাতন চিন্তা , কখনো খেলা করে , কখনোবা উড়ে বেড়ায় মনের আকাশে । আচ্ছা , এবার মামার কাছে কি চাইব ? অবশ্য মামার কাছে কিছু চাইতে হবে না । তিনি কিছু না কিছু দেবেন , এর কোনো ব্যতিক্রম হবে না । কিন্তু সমস্যা হল - পিচ্ছিটার টাইফয়েড ।
দুপাশে চমৎকার দৃশ্য দেখতে দেখতে সময় চলে যায় । পথে অবশ্য একবার বাস পাল্টাতে হল - গাবতলি থেকে । তারপর অবশ্য দুপাশের সৌন্দর্য্য অনেকটাই চলে গেছে । এখন গাড়ি-ঘোড়ার চাপে আর গ্রামের জিবন উপলব্ধি করা যায় না ।
দেখতে দেখতে বাস এসে থামল , নির্ধারিত জায়গা - ধানমন্ডিতে । এখান থেকেই যেতে হবে মামার বাসায় । বাস থেকে নেমে পড়লাম ।ব্যস , এবার একটা রিক্সা দরকার , তাতেই চেপে যাওয়া যাবে মামার বাসায় ।
একটা রিক্সায় উঠে পড়লাম ।রাস্তায় বেশ যানজট । আমি অনেক রাস্তা দেখেছি , কিন্তু ঢাকার রাস্তার মতো এতো যানজট আমি কোথাও দেখি নি । পথে চলা যায় না - শুধু গাড়ি আর গাড়ি । রিক্সার পর রিক্সা দেখা যাচ্ছে । না জানি বাংলার জনগন কি পরিমানে বেড়েছে । আমি অবশ্য এই ভিড়ের মধ্যে থেকে ঘেমে শ্যাষ ।
আমি যেখান থেকে উঠলাম তার কিছু দূর অর্থাৎ এখন আমার পিছনে যে কাউন রঙের বাড়িটা , ওখান থেকেই একটা মেয়ে উঠল একটি রিক্সায় ।এখন সেটি আমার রিক্সাকে পেছনে ফেলে ভালোই এগিয়ে যাচ্ছে । এতো ভিড় , তবু আগে ওঠার প্রতিযোগিতা , এটাও কি কম কথা ? সত্যি , প্রতিযোগিতা ছাড়া কোনো কাজই হয় না । মেয়েটিকে দেখে মনে হলো কোনো ভদ্র ঘরের মেয়ে । পোশাক-পরিচ্ছদ ই তার প্রমান বহন করে ।
যাহোক , ঢাকা শহরের মত এতো ব্যস্ত শহর আমি কোথাও দেখি নি । দেখবই বা কি করে ? দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও কি কখনও গেছি ? তবে শুনেছি , ঢাকার চেয়ে নাকি লন্ডন শহর অনেক ব্যস্ত । পায়ের তলায় পড়ে যদি একজন মানুষ পিষে মারা যায় তবু তার দেখার কেউ থাকে না । সত্যি তো হতেও পারে । দেখি নি তো ।
দেখতে দেখতে আমরা একটা চার রাস্তার কাছে আসলাম । এখনো সেই রিক্সাটি আমার সামনে । হয়তো কোনো চিন্তা ভাবনা নেই , এমন ভাবে চালাচ্ছে চালক ।
হঠাৎ দেখলাম , একটা নীল রঙের মাইক্রোবাস খুব দ্রুত এগিয়ে আসছে রাস্তার উলটো দিক থেকে ।খুব দ্রুত এগিয়ে আসছে । হঠাৎ গাড়িটি আমার সামনের রিক্সা চালককে ধাক্কা দিয়ে মুহূর্তে বাক নিয়ে অন্য পথ ধরে বেরিয়ে গেল । মুহূর্তের মধ্যে রিক্সা চালক এক দিকে ছিটকে পড়ল । ফলে তার তেমন কোনো ক্ষতি হয় নি । তবু , পায়ে কিছুটা চোট লেগেছে । আর মেয়েটি , তাকে দেখা গেল না । তবে রাস্তায় একটা জটলা মতো দেখলাম । বুঝতে পারলাম , ওখানে আছে মেয়েটা ।
আমি কিছুক্ষনের জন্যে মাইক্রোবাস চালককে দেখতে পেলাম । সে একটিবারের জন্যে মুখ বের করে পেছনে তাকিয়েছিল । কিন্তু পরক্ষনেই উধাও ।
শুনেছি ঢাকার মতো শহরে যদি কেউ বিপদে পড়ে তবে তার সাহায্য করার মতো কেউ হয় না । হয়ত তাকে কেউ নিয়ে যায় নিকটাত্মীয় এসে নয়তো রাস্তায় ধুকে-ধুকে মরতে হয় । আমি আমার রিক্সা চালককে কিছুক্ষনের জন্যে থামতে বললাম । তারপর , রিক্সা থেকে নেমে সেখানে ছুটে গেলাম । ভিড় ঠেলে একটু সামনে গিয়ে দেখলাম - সত্যি তাই । সাহার্য্য কেউ নেই । একি কান্ড , একটা মেয়ে রাস্তার উপর অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে অথচ তাকে সাহায্য করার কেউ নেই । অথচ , তাকে ঘিরেই কিন্তু অনেক মানুষ । আমার মনে হল - " মানুষ, মানুষের জন্যে " এই বাক্যটি যে লেখক লিখেছেন তিনি যদি আজকের এই ঘটনাটি সচক্ষে দেখতেন তবে এমনটি কক্ষনো লিখতে পারতেন না ।
আমি সাহায্য করতে যাচ্ছি । কিন্তু উপস্থিত লোকজন বলল ---- ভাই যাবেন না । বিপদ হতে পারে ।
আমি বললাম ----- বিপদ ? কিসের বিপদ ? একটা মেয়ে রাস্তার মাঝখানে আমাদের সবার সামনে এভাবে মারা যাচ্ছে , আর আপনারা বলছেন ' বিপদ ' ? নেন ভাই , কেউ একটু ধরেন ?
কেউ ধরতে রাজি হল না । আমার রিক্সা চালকও দেখতে এসেছিল । তাকেও বললাম -- ভাই একটু ধরেন তো
কিন্তু কি আশ্চর্য , সেও ধরতে রাজি হল না । আমি বললাম --- কাউকেই লাগবে না । আমি একাই নিয়ে যাচ্ছি । --- বলে মেয়েটাকে কোলে তুলে নিলাম । রিক্সা চালককে বললাম ---- একটু হাসপাতাল পর্যন্ত নিয়ে যাবেন ?
তবু সে রাজি হল না ।
কি আর করা , আর কারো কাছে কছু শুনলাম না । কেউ কিছু বললও না । আমি তাকে কোলে নিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়াতে লাগলাম ।
কিছুদুর যাওয়ার পরে একটা হাসপাতাল পেলাম ।
এখন ভর্তি করা দরকার । এবং সেটা খুব শীঘ্রই । কারন পেশেন্ট তো খুবই সিরিয়াস ।
ভর্তি করার সময় ঝামেলা বেধে গেল ।
ভর্তি বিভাগের ডাক্তার আমাকে জিজ্ঞাসা করল --- রুগীর নাম কি ?
সমস্যায় পড়ে গেলাম । কি উত্তর দিব আমি ? রুগীর নামটাই তো আমার অজানা । মাথায় যেনো কোনো উত্তর আসছেই না । আসলে অনেকটা পথ দৌড়ে একেবারে নাজেহাল হয়ে পড়েছি । কিন্তু নাম তো বলতেই হবে । নয়তো কি ভর্তি নিবে ? আবার বেশি সময় দেওয়া যাবেই না । তাই তাড়াতাড়ি বলতে যেয়ে বলেই ফেললাম একটা নাম ---- আলেয়া ।
অ্যাঁ ,কি বলতে কি বলে ফেললাম আমি ? নামটা যে আমার নামের সাথে মিলেই গেল ।
এর পর আবার প্রশ্ন ---- আপনার নাম ?
নামটা কিন্তু বলতে মোটেও বাধল না । কারন , নিজের স্মৃতিতে এখন কিছু থাক বা না থাক , নিজের নামটা এখনও আছে ।
জট পাকিয়ে গেল আর একটা প্রশ্নে --- পেশেন্ট আপনার কি হন ?
বিপদের পর বিপদ । প্রশ্নের পর প্রশ্ন । এবার কি উত্তর দিব আমি ? একে তো অনেকটা পথ খাটুনি , তাতে এই সব প্রশ্ন । ঘেমে একেবারে নেয়ে উঠলাম । ঘামে আমার নাকের ডগা দিয়ে পানি পড়তে চাইল । কিন্তু তার আগেই হাত দিয়ে ঝেড়ে ফেলে দিলাম । উত্তরের দেরি দেখে ডাক্তার আমাকে আবারো একই প্রশ্ন করলেন ---- পেশেন্ট আপনার কি হোন ?
ধুর !!!! প্রতিবার একই প্রশ্ন । আর সহ্য হয় না । একটা কিছু বলাই উচিত । এবং মাথা থেকে কি বের হলো কে জানে ? তবে ডাক্তার দেখলাম লিখল - " বোন "
[ চলবে ........................]
আরো পড়ুন ঃ
ক্রোম ব্রাউজার এর জন্য নতুন আপডেট আনল গুগল
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন