[ পর্ব ; এক ]
আমার নাম আলিম । বাস কোমরপুর , বর্ডার এলাকা ।
নদীর তীর , ইছামতি নদী । নদীটি বাংলাদেশ এবং ভারতের সীমানা বরাবর । কখনো কখনো নদীর তীরে বসে থাকি । আবার কখনো বন্ধু-বান্ধব দের সাথে হাসি- তামাশায় মেতে উঠি , আড্ডা দেই ।
আমি চাকরি করি । এই তো বছর দুই হল চাকরি পেলাম । এখনি তো জিবনকে উপভোগ করার সময় ।
আমার বন্ধু অনেক বেশি , সবার সাথে মিশে থাকি সেই জন্যে হয়তো । প্রায় বিকালে , এক সঙ্গে নরম ঘাসের উপর বসে আমরা গল্প করি । কখনো হাসির , কখনো দুঃখ-কষ্ট আর বেদনার ।
তবু কেনো জানি না , মাঝে মাঝে নিজেকে খুব একা লাগে । মনটা তখন ভারি হয়ে যায় । সব কিছু ছেড়ে তখন একা থাকতে ভালো লাগে ।
আমরা দুই ভাই , বোন নেই । আমার একটা বোনের খুব শখ ছিল , কিন্তু কি আর করার , বিধাতার পরিহাস ।আমার মায়ের যখন দ্বিতীয় সন্তান হল , অর্থাৎ, আমার ছোট ভাই হালিম হওয়ার সময় আমি ভেবেছিলাম আমার বোন হবে । কিন্তু বিধাতা দিলেন অন্য কিছু । তবু আমি অসুখী নই । আমি এখন সব দিক থেকেই বলীয়ান । বিপদে-আপদে দুই ভাই তো এগিয়ে যেতে পারি , এর চেয়ে বেশি কে আর চায় ।
আজ মনটা খুব খারাপ । দেখলেই বোঝা যায় , আমি কিছু ভাবছি । সারাটা দিনই । বিকালে মাঠে গেলাম তবু তো আমার ভাবনা গেল না । সত্যি , আমি কিছু ভাবছি । সত্যিই তো , একদিনেই আমি ভাবনার জগতের রাজা হয়ে গেলাম ।
বন্ধুদের মাঝে গিয়ে বসলাম । অনেক বন্ধু আমার । রনি , ঝনি , অপু , তপু , রবি আরো অনেকে । প্রায় সবাই চাকরি করে । বছরে এই একটা দিনই সব থেকে বেশি মন খারাপ থাকে আমার । অবশ্য এর কারনও আছে । আর সেটাই সব থেকে বেশি আকর্ষণীয় বা রোম্যান্টিক ব্যাপার ।
আজ বন্ধুদের কাছ থেকে একটু ভিন্ন জায়গায় বসলাম । মনটা খুব খারাপ । আমি এখনো ভাবছি । আবারো বন্ধুদের আসরে গিয়ে বসলাম ।
তবু যেন সেই একই জিনিস ভাবছি । মাথা থেকে ভাবনার পোকা নড়ছেই না । আমার অবস্থা দেখে রবি জিজ্ঞাসা করলো -- কি ভাবছিস ?
আমি একটু হতচকিত সরে বললাম -- কই না তো ? কিছু ভাবছি না ?
- না বললে কি চলে ? আমরা কি কিছু বুঝি না ? মুখ দেখলেই সব বোঝা যায় বুঝলি ? -- বলেই হো-হো করে হেসে দিল রবি ।
এই রবির উপর মাঝে মাঝে প্রচন্ড রকমের রাগ ওঠে । নিজে তো বকবে , অন্যদেরকেও বকাবে । মাঝে-মাঝে আবার হো-হো করে হাসে । অবশ্য , কিছু-কিছু সময় আবার বড্ড ভালো লাগে ওকে । যখন কেও ওর সাথে ভালো কথা বলে , তখনো হাসে । আবার খারাপ বা কটু কথা বললেও তোয়াক্কা করে না , হাসতে ওকে হবেই ।
আমিও একটু জোরেই বললাম -- কি বুঝেছিস বল তো দেখি ?
কথাটা বোধ হয় সবাই এবার সিরিয়াস ভাবেই নিলো । সবার দৃষ্টি আমার উপরে ।
মাঝ থেকে তপু বলল -- কি বলিস , বুঝতে পারি নি ? তুই হয়তো কারো প্রেমে পড়েছিস কিন্তু রাক্ষুসি প্রেমিকা তোকে ছ্যাকা দিয়ে চলে গেছে । আচ্ছা , বলতো মেয়েটা কে ?
- ধ্যাত , কি বলতে চাস ? আমার বিয়ে হয়ে গেছে তারপরও আবার প্রেম ? তোরা পারিসও বটে ।
-- তবে , তবে এই আনন্দময় বিকালে এমন মন খারাপ করে কি ভাবছিস ? -- রবি বলল ।
তপু বলল -- ব্যাপারটা কি আমরা জানতে পারি ?
-- পারবি না কেনো ? তবে এই আনন্দপূর্ণ দিনে আর শুনতে হবে না । অন্য একদিন সময় বুঝে শুনে নিস ।
-- অন্য একদিন ? সে দিনও তো তুই এমনই বলবি - শন্তু বলল -- তুই এখনই বল । আচ্ছা , ঘটনা কি হাসির নাকি বেদনার ।
-- ব্যাপারটা যে তোদের কিভাবে বলব ......
--- আমরা কি তোর বন্ধু না ? -- রবি বলল -- তবে শুনতে পারব না কেনো ?
সবশেষে পরিস্থিতি এতোটাই ঘোলাটে হলো যে , আমাকে মুখ খুলতেই হলো ।
আমি বললাম -- শোন তাহলে ... । প্রতিটি মানুষের জিবনে দুইটি পর্ব থাকে । একটা সুখের , অন্যটা দুখের । কারো জিবনে একঘেয়ে সুখ হয় না । আমার জীবনটা ঠিক তেমনই , একঘেয়ে সুখ কখনো আমার সহ্য হয় না । দুঃখ যেনো আমাকে ঠিকই চিনে নেয় । এমনই একটা পর্ব , তবে দুঃখের পর্ব । যেটা অনেক দিন ঘটেছিল । যা আমার মনে দাগ কেটে আছে আর থাকবেও চিরকাল ।
এরই মধ্যে রবি বলল -- তুই তো আসল কথাটাই বলছিস না ।
ওরে এটা তো শিরোনাম , পরে বিস্তারিত হবে । দোষ কি ?
[চলবে......। ]
অপেক্ষারত পরবর্তী পর্বের জন্য।
উত্তরমুছুনপরবর্তী পর্ব
মুছুনhttps://amaderkotha24on.blogspot.com/2021/03/aleya-jack-o-lantern-part-2.html