রমযান মাস । রহমত , বরকত ও ফজিলতে পরিপূর্ণ একটি মাসের নাম রমযান মাস ।
রমযান ( আরবি ঃ রমদ্বান ) । ইসলামিক বর্ষপুঞ্জি অনুসারে আরবি মাসের নবম মাস এটি । রমযান মাসে রোযা পালন ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের মধ্যে তৃতীয় ।
মাহে রমযান বছরের বাকী এগারো মাস অপেক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ , মর্যাদাশীল ও ফজিলতপূর্ণ ।
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআন মাজিল এ ইরশাদ করেছেন ( তরজমা ) ঃ মাহে রমযান , যাতে নাজিল করা হয়েছে কুরআন যা মানুষের জন্যে হেদায়াত ও সুস্পষ্ট নির্দেশনা এবং ( যা আসমানী ) হেদায়াত ও সত্য - মিথ্যার পার্থক্য নির্ণয়কারী । ( সুরা বাকারা ২ ঃ ১৮৫ ) ।
হাদিস শরিফে এসেছে ঃ যখন রমযানের প্রথম রাতের আগমন ঘটে , তখন দুষ্ট জ্বীন ও শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয় । জাহান্নামের দরজা সমুহ বন্ধ করে দেওয়া হয় , তার একটি দরজাও খোলা হয় না এবং জান্নাতের দরজা গুলো খুলে দেওয়া হয় , তার একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না । আর একজন ঘোষক ঘোষনা করতে থাকে ঃ "হে কল্যানের প্রত্যাশী , অগ্রসর হয় ; হে অকল্যানের প্রত্যাশী , থেমে যাও । " আর আল্লাহ তায়ালা এ মাসের প্রতি রাতে অসংখ্য জাহান্নামীকে মুক্তি দান করেন । --- ( জামে তিরমিজি ৬৮২ ; বায়হাকি শুয়াবুল ইমান ৩৬০১ ; শুনানে ইবনে মাজাহ ১৬৪২ ; মুসতাদরাকে হাকেম ১৫৭২ ) ।
অন্য এক হাদিসে এসেছে , হযরত কা'ব ইবনে উজরা রা. হতে বর্ণিত , তিনি বলেন ঃ একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে বললেন , তোমরা মিম্বরের নিকট সমবেত হও । আমরা সকলেই সেখানে উপস্থিত হলাম । যখন তিনি মিম্বরের প্রথম সিড়িতে পা রাখলেন , তখন বললেন , আমিন । যখন দ্বিতীয় সিড়িতে পা রাখলেন , বললেন , আমিন । এবং যখন তৃতীয় সিড়িতে পা রাখলেন তখনো আমিন বললেন ।
হযরত কা'ব ইবনে উজরা রা. বলেন , যখন তিনি মিম্বর থেকে অবতরন করলেন , আমরা জিজ্ঞেস করলাম , ইয়া রাসুলুল্লাহ ! আজ আমরা আপনাকে এমন কিছু বলতে শুনেছি যা ইতিপূর্বে কখনো শুনি নি ।
উত্তরে তিনি বললেন , হযরত জিব্রাইল আ. আমার নিকট আগমন করেছিলেন । যখন আমি প্রথম সিড়িতে পা রাখলাম তখন তিনি বললেন , ধ্বংস হোক ঐ ব্যক্তি যে রমযান মাস পেল , তবু তার গুনাহ মাফ হল না ।
আমি বললাম , আমিন ।
যখন দ্বিতীয় সিড়িতে পা রাখলাম তখন তিনি বললেন , ধ্বংস হোক ঐ ব্যক্তি যার নিকট আপনার নাম উচ্চারিত হল অথচ সে আপনার প্রতি দরুদ পড়ল না ।
আমি বললাম , আমিন ।
যখন তৃতীয় সিড়িতে পা রাখলাম তখন তিনি বললেন , ধ্বংস হোক ঐ ব্যক্তি যে বৃদ্ধ পিতা মাতা উভয়কে অথবা যে কোন এক জনকে পেল অথচ তারা কেউ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারল না । অর্থাৎ তাদের খেদমতের মাধ্যমে নিজেকে জান্নাত বাসি করতে পারল না ।
আমি বললাম , আমিন ।
----- ( মুসতাদরাকে হাকিম ৭৩৩৮ )
রমযানের গুরুত্ব বিষয়ে এমন অসংখ্য হাদিস আছে ।
রমযানের রোজাদার দের জন্য রয়েছে অফুরন্ত সুসংবাদ ।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআন শরিফে উল্লেখ করেছেন ঃ হে মুমিনগন , তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে , যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি ; যাতে তোমরা তাক্কওয়া অবলম্বনকারী ( মুত্তাকী ) হতে পার । ( সুরা বাকারা ঃ ১৮৩ )
হাদিস শরিফে এসেছে , হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত , রাসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন :
আল্লাহ তায়ালার কসম ; মুসলমানদের জন্য রমযানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসে নি এবং মুনাফিকদের জন্য রমযান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতি মাসও আর আসে নি । কেননা মুমিনগন এ মাসে ( গোটা বছরের জন্য ) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে । আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করে । এ মাস মুমিনের জন্য গণিমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারন । --- ( মুসনাদে আহমাদ ৮৩৬৮ ; বায়হাকি শুয়াবুল ইমান ৩৩৩৫ )
হাদিস শরিফে রোজাদারদের পুরষ্কারের অনেক বর্ণনা আছে । মহানবি সা. বলেছেন ঃ
জান্নাতে একটি দরজা আছে যার নাম রাইয়ান । কিয়ামতের দিন এ দরজা দিয়ে কেবল রোজাদার ব্যক্তিরাই প্রবেশ করবে । অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না । ঘোষনা করা হবে - কোথায় সেই সৌভাগ্যবান রোজাদারগন ? তখন তারা উঠে দাঁড়াবে । তারা ব্যতিত কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না । অতঃপর রোজাদারগন যখন প্রবেশ করবে তখন তা বন্ধ করে দেওয়া হবে । ফলে কেউ ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না । ---- ( সহিহ বুখারি ১৮৯৬ ; সহিহ মুসলিম ১১৫২ )
হযরত সালমান ফারসি রা. হতে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন ঃ
রমযান মাসে এমন একটি রাত আছে যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম । এবং এ মাসে বরকত এতোটাই যে , নফল ইবাদত ফরজ ইবাদতের সমান সওয়াবের । আর একটি ফরজ ইবাদত ৭০ টি ফরজ আদায়ের সমান সওয়াবের ।
রাসুলুল্লাহ সা. রমযান মাসে বেশি বেশি প্রার্থনা করতে বলেছেন । বায়হাকি , সহিহ ইবনে খুযায়মা সহ একাধিক হাদিস গ্রন্থে রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন ঃ রমযান মাসে তোমরা বেশি বেশি পাঠ করো - লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ( আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই ) ও আস্তাগফিরুল্লাহ ( দয়াময় ক্ষমা করো ) । এবং আল্লাহ এর কাছ থেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রেহাই ও জান্নাতের জন্যে প্রার্থনা করো । এ মাসের প্রথম দশক রহমতের , মধ্যম দশক মাগফিরাতের এবং শেষ দশক হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তির ।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে রমযানের রোজা রাখার তওফিক দান করুক ।।। ( আমিন ) ।।।
পড়ুন ঃ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন